‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয় হয়তো শঙ্খচিল শালিখের বেশে;/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে…’ (জীবনানন্দ দাশ)। বাংলার আদিগন্ত মাঠ জুড়ে এখন হলুদে-সবুজে একাকার। নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতি। সোনালি ধানের প্রাচুর্য।
আনন্দধারায় ভাসছে কৃষকের মন-প্রাণ। বাড়ির উঠোন ভরে উঠবে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে। এসেছে অগ্রহায়ণ। হিম হিম হেমন্ত দিন। হেমন্তের প্রাণ নবান্ন আজ। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বসবে গ্রামীণ মেলা।
এখন আমন ধান কাটার মাহেন্দ্র সময়। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার পুরোভাগে থাকা এই নবান্ন উৎসব অনাদি কাল হতে বাঙালির জীবন অধিকার করে আছে। লোককথায় এদিনকে বলা হয়ে থাকে বাৎসরিক মাঙ্গলিক দিন। এ সময় বিবিধ ব্যঞ্জনে অন্নাহার, পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মুখর হয় জনপদ। মেয়েকে নাইয়র আনা হয় বাপের বাড়ি। নতুন ধানের ভাত মুখে দেওয়ার আগে কোথাও কোথাও মিলাদ, মসজিদে শিন্নি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষকের ঘরে পূজার আয়োজন চলে ধুম-ধামে।
১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব উদযাপন শুরু হয়। জাতীয় নবান্নোত্সব উদযাপন পর্ষদ প্রতিবছর পহেলা অগ্রহায়ণ নবান্ন উৎসব উদযাপন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরের মুক্তমঞ্চে এবারো পালিত হবে জাতীয় নবান্ন উৎসব ১৪২৪।
‘এসো মিলি সবে নবান্নের উৎসবে’ শ্লোগানে আজ সকাল ৭টা ১ মিনিট চারুকলার বকুলতলায় অনুষ্ঠানের সূচনা করবেন প্রবীণ সাংবাদিক তোয়াব খান। উৎসবে নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি, নবান্ন কথন, ঢাক-ঢোলের বাদন ও যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করা হবে। সকাল ৯টায় বকুলতলা থেকে নবান্ন শোভাযাত্রা বের করা হবে। বিকালে বরীন্দ্র সরোবর মুক্তমঞ্চে থাকবে পটগান, মহুয়ার পালা, লাঠি খেলা ও সংগীত।